পয়লা এপ্রিল
– রেহানা দেবনাথ
অজয় সকালে ঘুম থেকে উঠতেই ওর বাবা টেবিলের দিকে হাত দেখিয়ে বললো তোর একটা পার্সেল এসেছে,খুলে দেখ।
অজয় দেখলো গিফ্ট প্যাকেট। আনন্দের সঙ্গে খুলতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো কে পাঠিয়েছে। প্যাকেটটা অনেক যত্ন করে খুলে দেখলো তাতে লেখা আছে এপ্রিল ফুল! অজয় ওর বাবার দিকে তাকাতেই ওর বাবা ক্যালেন্ডারের দিকে আঙ্গুল দেখায়।অজয় দেখে আজ পয়লা এপ্রিল।সঙ্গে সঙ্গে ওর বাবা হাসতে শুরু করলো আর বাচ্চাদের মত এপ্রিল ফুল, এপ্রিল ফুল বলে চেঁচাতে লাগলো।
অজয় অভিমানী সুরে বলে- এখন আমি কত বড় হয়ে গেছি তবুও তুমি আমায় প্রতি বছর এপ্রিল ফুল।তারপর বাবা আর ছেলে মিলে মা বেঁচে থাকাকালীন কিভাবে দু’জনে মিলে মাকে এপ্রিল ফুল করতো সেইসব স্মৃতির রোমন্থন করে।
অজয় রেডি হয়ে অফিস বেরিয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবলো আজ আর কেউ তাকে এপ্রিল ফুল করতে পারবে না।সেই ভাবনাতে ফোনে বন্ধুদের মেসেজ পর্যন্ত দেখল না।
দুপুরে অজয়ের মোবাইলে হঠাৎ তার বন্ধু শান্তনুর ফোন। ফোন রিসিভ করতেই শান্তনু বলে ওঠে কাকুর শরীর খারাপ তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়। অজয় হাসতে হাসতে বলে আমি ভুলিনি আজ পয়লা এপ্রিল! এবছর আর আমাকে বোকা বানাতে পারবি না, কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয়!
কিছুক্ষণ পর আবার জ্যাক এর ফোন আসে আর একই কথা বলে।অজয় এবারেও সেই একই কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
একই ভাবে আরো দুই বন্ধু ফোন করে।অজয় মনে মনে বলে ভাবলো আজ যতই চেষ্টা কর এপ্রিল ফুল করতে পারবি না!
কিছুক্ষণ আগেই তার বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে খাওয়া দাওয়া সেরে টিভি দেখছে।
বন্ধুরা মেসেজ পাঠিয়েছে এপ্রিল ফুলের ভয়ে সেগুলোও দেখল না।
সন্ধ্যা পর বাড়ি ফিরে দেখে ঘর অন্ধকার বাবা ঘরে নেই। বুকটা ছ্যাত করে ওঠে!তাহলে কি ওরা সত্যি বলছিল।
অজয়ের দু’চোখে জল চলে আসে বাবা ছাড়া সে কিভাবে থাকবে! বাবা এখন কি অবস্থায় আছে? কোথায় আছে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা ঘুরে যায়।
এমন সময় পাশের বাড়ির কাকিমা এসে হাতে চাবি দিয়ে বলে তুমি এতক্ষণে এলে তোমায় কতবার সবাই ফোন করলো তুমি এলে না। তোমার বাবা এখন সিটি হাসপাতালে আছে।
কথাটা শুনেই অজয় বাচ্ছা ছেলের মত হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলে বাবার কিছু হবে না তো কাকীমা, বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই…
কাকীমা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তোমার বাবার কিচ্ছু হবে না উনি সুস্থ আছেন, তোমার ছোটো কাকুর হার্ট এট্যাক হয়েছে,হাসপাতালে ভর্তি। তোমার বাবা সেখানে গেছেন।
কথা শুনে অজয় চোখ চোখ মুছতে মুছতে হাসপাতালের উদ্যেশ্যে রওনা দিল।